এম মখলিছ খান ঃ
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশেই গা-ঢাকা দিয়েছেন দলটির সকল পর্যায়ের নেতারা। অনেকে ইতোমধ্যেই পালিয়েছেন দেশ থেকে, অনেকেই আছেন পলায়নের সুযোগের অপেক্ষায়।
তবে আওয়ামী লীগের পলায়নকারী নেতা অনেকের চোখ পড়েছে সিলেট সীমান্তে। ভারতে পালানোর নিরাপদ রুট হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন সিলেট সীমান্তকে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২০ জন নেতা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর পর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ। ওই সময় গুঞ্জন উঠে- সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পাড়ি জমিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এরপর একে একে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে থাকেন।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে যারা ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও ঢাকার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা বর্তমানে শিলংয়ে অবস্থান করছেন।
এর আগে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্যসাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। বর্তমানে তারা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন বলে ঘনিষ্টজনরা নিশ্চিত করেছেন। আনোয়ার ও হাবিব দু’জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ভারতে অবস্থানরত কয়েকজন নেতার পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা রয়েছে। তারা অন্য গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
একাধিক সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গরু ও চিনি চোরাচালানের সাথে জড়িত সীমান্তের দুইপাড়ের চোরাকারবারীরা মূলত নেতাদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। সীমান্ত পারাপারের জন্য দুইপাড়ের চোরাকারবারিরা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় গত শুক্রবার রাতে আটক হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন আহমদ মানিক।
এছাড়া পাহাড়ি এলাকা দিয়ে শিলং যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে। পান্নাও সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে