লেখক- মাওলানা সোলাইমান হানাফি
#পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই কুরবানী'র ধারাবাহিকতা চলে আসছে, তবে পদ্ধতি ছিল ভিন্ন যেমনটা কোরআনে পাওয়া যায় আদম আঃ'র দুই সন্তান হাবিল+কাবিলের কাহিনী। সুরায়ে মায়িদাহ'র ২৭___৩১
وتل عليهم نبأبني ادم بالحق .اذ قربا قربانا فتقبل من احدهما ولم يتقبل من الاخر .قال لاقتلنك . قال انما يتقبل الله من المتقين ○
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী তাদের'কে আপনি জানিয়ে দিন (আহলে কিতাবদের'কে) আদম আঃ'র দুই সন্তানের ঘটনা (হাবিল ও কাবিল) তারা দু'জন যখন কুরবানী করলো তখন আল্লাহ তাদের একজনে'র (হাবিল) কুরবানী কবুল করেন, অন্যজনের কুরবানী (কাবিল) কবুল করেন নাই, তখন একজন বলল অবশ্য'ই আমি তোমাকে হত্য করবো, অন্যজন বলল নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিনদের আমল কবুল করেন।
لئن بسطت الي يدك لتقتلني ماانا بباسط يدي اليك لاقتلك .اني اخاف الله رب العالمين ○
(হাবিল) আরো বল্লো যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য তোমার হাত প্রসারিত করো তার পর ও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য কিছুই করবো না। কারন আমি বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ'কে ভয় করি।
اني اريد ان تبوء باثمي واثمك فتكون من اصحاب النار وذالك جزاء الظلمين ○
(হাবিল) আরো বল্লো, আমি চাই আমাকে হত্যা করার অপরাধ এবং ইতিপূর্বে বাবা'র নির্দেশ পালন না করার যে অপরাধ করেছো সব অপরাধ তোমার ঘাড়ে নাও, আর তুমি হয়ে যাও জাহান্নামের অধিকারী, জালিমদে'র প্রতিদান এরকমই হয়ে থাকে।
فتوعت له نفسه قتل اخيه.فقتله فاصبح من الخسرين ○
অথঃপর তার নফ'স তার উপর বিজয় লাভ করলো আপন ভাইকে হত্যা করতে উৎসাহিত হলো। অবশেষে আপন ভাইকে হত্যা করলো এবং ক্ষতিগ্রস্থ'দের অন্তর্ভুক্ত হলো।
فبعث الله غرابا يبحث في الارض ليريه .كيف يواري سوءة اخي . قال يويلتي اعجزت ان اكون مثل هذاالغراب فأصبح من الندمين ○
(কাবিল যখন তার ভাই'কে হত্যা করলো তখন তার চিন্তা হলো আপন ভাইয়ের লাশ কিভাবে লুকাবে) তখন আল্লাহ আসমান হতে একটি কাক প্রেরণ করলেন এবং সেই কাক যমিনে এসে মাঠি খুড়তে লাগলো, এবং শিখিয়ে দিলো কিভাবে ভাইকে লুকাতে হবে, তখন কাবিল কাকের দিকে থাকিয়ে আফসোস করো বলতে লাগলো হায় আমি একটি কাকের সমান ও হতে পারলাম না, এবং সে লজ্জিত হলো।
#মূল গটনা হলো এই______দুনিয়া সৃষ্টির পর প্রথম মানুষ হলেন, আদম আঃ এবং তাঁর বাম পাজরে গোশত থেকে তৈরি করা হাওয়া আঃ ___আল্লাহ তায়ালা তাদের মাজে বৈবিহক পদ্ধতিতে হালাল সম্পর্কে'র ব্যবস্হা করে দেন। ফলে হয়ে যান তাঁরা স্বামী স্ত্রী, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা'র মহান ইচ্ছা হলো দুনিয়াতে মানুষ বিস্তার করা তাই আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ'র মাধ্যমে হাওয়া আঃ'র প্রতি গর্ভে দু'জন করে সন্তান দান করেন, একজন ছেলে একজন মেয়ে।
#এবং আল্লাহ তায়ালা নিয়ম চালু করে দেন এক গর্ভে'র মেয়ে অন্য গর্ভের ছেলের সাথে বিয়ে হবে, এই নিয়মানুযায়ী আদম আঃ'র প্রথম দুই ছেলে সন্তান হলো হা*বিল ও কা*বিল এবং আদম আঃ তাদের মাজে নির্দেশ জারি করেন, কা*বিল বিয়ে করবে হাবিলের সহজাত বোন'কে এবং হাবিল বিয়ে করবে কাবিলে'র সহজাত বোন'কে। কিন্তু এ নির্দেশ কাবিল অমান্য করলো এবং সে বল্লো আমি আমার সহজাত বোন'কে বিয়ে করবো। কারন তার সহজাত বোন ছিল পরম সুন্দরি আর হাবিলের সহজাত বোন ছিল একটু কম সুন্দর।
#জাবাবে আদম আঃ বল্লেন এটা তোমাকে মানতেই হবে কারন এ হুকুম আল্লাহ তায়লা'র পক্ষ থেকে। কিন্তু কাবিল কিছুতে'ই মানতে রাজি না সে তার সুন্দরি বোনকে বিয়ে করবেই। তাই আল্লাহ তায়লা'র পক্ষ থেকে আদম আঃ'কে বলা হলো তুমি তাদের'কে বলে দাও আল্লাহ'র রাস্তায় কুরবানী করতে, যার কুরবানী আল্লাহ কবুল করবেন সেই সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে করবে। একথায় কাবিল সম্মতি জানলো তাই দুনোজন কুরবানী করতে রাজি হলো।
#তখনকার সময়ে কুরবানীর পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা, নিয়ম ছিল যার কুরবানী কবুল হবে তার কুরবানী'র বস্তু আসমান থেকে এক অগ্নি খন্ড এসে কুরবানী'র তুলে নিবে, আর সেটা'ই হলো কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত।
অবশেষে হাবিল ও কাবিল কুরবানী করলো, কাবিল যেহেতু চাষি কাজ করতো তাই সে তার কুরবানী'র বস্তু হিসাবে কিছু তরিতরকারি পাহাড়ে'র এক টিলায় রাখলো, আর হাবিল যেহেতু গরু ছাগল পালতো তাই সে মোটাতাজা একটি পশু কুরবানী'র বস্তু হিসাবে পাহাড়ে'র টিলায় রাখলো, অবশেষে আল্লাহ হাবিলে'র কুরবানী কবুল করলেন।
কারন তার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ তায়ালা'কে রাজি এবং খুশি করা আর কাবিলে'র উদ্দেশ্য ছিল সুন্দরী মেয়ে'কে বিয়ে করা।
#যখন কাবিল দেখলো সুন্দরী বোন'কে বিয়ে করার আর কোন রাস্তা নাই, তখন সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে কাবিল'কে হত্যা করে পথের কাটা সরাবে, এক পর্যায়ে সে কাবিল'কে হত্যা করলো এবং সে হয়ে গেলে মানব ইতিহাসের প্রথম হাত্যাকারী।
কাবিল যখন হাবিলকে হত্যা করলো তখন তার সামনে আসলো এক বড় বিপদ এজন্য যে সে কাবিলে'র লাশ কি করবে? কারন তখন কাফন দাফনের নিয়ম ছিলনা। যখন কাবিল ভাবতে লাগলো সে তার মৃত ভাইয়ের লাশ কিভাবে লুকাবে? তখন আল্লাহ আসমান থেকে পাঠিয়ে দিলেন যমিনে একটি কাক, এবং কাক শিখিয়ে দিল কিভাবে সে তার ভাইয়ের লাশ দাফন করবে, তখন থেকে শুরু হলো মানব ইতিহাসের কবর দেওয়া সূচনা।