হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথপুরের পল্লীতে পূর্ব বিরোধ এর জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতা এমেল মিয়া গং ব্যক্তিবর্গ অতর্কিত হামলা চালিয়ে নিরীহ মর্তুজ আলীর টং দোকান ভাংচুর করার পাশা-পাশি মর্তুজ আলী গংদের মারাত্মক আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ পত্র ও ১৪ ই সেপ্টেম্বর সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানাযায়, জায়গা -জমি নিয়ে বিরোধ এর জের ধরে ২০২২ সালের জুলাই মাসে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত হাছন ফাতেমাপুর গ্রাম নিবাসী মৃত তহির আলীর ছেলে মোঃ মর্তুজ আলীর সাথে একই ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত সমসপুর গ্রাম নিবাসী মৃত ইসকন্দর আলীর ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাবশালী এমেল মিয়ার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এমেল মিয়ার ধারালো অস্ত্রাঘাতে মর্তুজ আলীর বাম হাতের কবজি কাটা পড়ার পাশাপাশি তার লোকজন আহত হন। এই ঘটনায় মর্তুজ আলী প্রতিপক্ষ এমেল গংদের বিরুদ্ধে তৎসময়ে মামলা দায়ের করেন। যা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এরই জের ধরে চলতি ২০২৪ সালের চলমান সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ বেলা প্রায় দুই ঘটিকার দিকে এমেল মিয়া ও তার লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মর্তুজ আলীর বসত বাড়ীর নিকটবর্তী কেইনবাড়ী বাজারস্থ মর্তুজ আলীর টং দোকানে হামলা চালিয়ে টং দোকান ঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর করার পাশাপাশি মর্তুজ আলী ও তার স্রী মিনা বেগম সহ দোকান এর কর্মচারীকে মারধর করিয়া আহত করেছে।আহতরা স্থানীয় ভাবে ও জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও নগদ অর্থ সহ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা সমপরিমাণ মূল্যের আসবাবপত্র নিয়ে গেছে এমেল মিয়া ও তার লোকজন। এ ব্যাপারে এমেল মিয়া (৬৫)কে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মর্তুজ আলী বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় ১২ ই সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ এর পরিপেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানার এসআই সজীব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে আলাপকালে অভিযোগকারী মর্তুজ আলী বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসে আমার বোনের জায়গা- জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এই এমেল মিয়ার সাথে আমার ঝগড়া হলে এমেল মিয়া ও তার সহযোগীরা আমার বাম হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে পেলে। এই ঘটনায় আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে বিগত ১২ ই সেপ্টেম্বর দুপুরে আমার আয় রোজকারের একমাত্র সম্বল টং দোকানে আমি ব্যবসারত অবস্থা আওয়ামীলীগ নেতা এমেল মিয়ার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমার আর্তচিৎকারে আমার স্রী এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করার পাশাপাশি দোকান ঘর ভাংচুর করে নগদ অর্থ সহ আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। সে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে চায়না। তাই আমি প্রশাসনের আশ্রয় নিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এই এমেল মিয়া জায়গা -জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৪/১৫ বছর আগে তার ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল গনির স্ত্রী আমার আপন বড় বোন মনরা বেগমকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছিল। আমার বোন মানসম্মান এর বিষয় চিন্তা করে আইনের আশ্রয় নেননি। তিনি তৎসময়ে ঘটনার দুই /তিন মাস পর লন্ডন চলে যান। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও এমেল মিয়ার ভয়ে দেশে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। সে নাকি তাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে দেশে আসলে মেরে ফেলবে। মর্তুজ আলী আরও বলেন, আমার বোন লন্ডন যাওয়ার পর বোনের জায়গা -জমির এটর্নি পাওয়ার আমার নামে দেওয়ায় এমেল মিয়া আমাকে মেরে ফেলতে চায়। আমি প্রশাসনের নিকট সুবিচার প্রার্থনা করছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা এমেল মিয়া আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি। সে এই নিরীহ মর্তুজ আলীর হাতের কবজি কেটেও কান্ত হয়নি।আবার মর্তুজ আলী ও তার স্ত্রীর উপর হামলা করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করেছে। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আলাপকালে মর্তুজ আলীর বোন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মনরা বেগম বলেন, আমার স্বামীর ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা এমেল মিয়া একজন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক সে আমার স্বামীর সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমি দেশে থাকতে প্রায় ১৫ বছর আগে আমাকে সে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেছে। যা এলাকাবাসী অবগত আছেন। আমি মানসম্মানের ভয়ে মামলা মোকদ্দমায় যাইনি। আমি লন্ডন আসার পর আমার ভাই মর্তুজ আলীকে সম্পত্তির পাওয়ার এটর্নি দেওয়ায় সে বিভিন্ন সময়ে ফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যে আমি যদি দেশে যাই তাহলে সে আমাকে ও আমার বাচ্চাদের জানে মেরে ফেলবে। তাই আমি দেশে যেতে সাহস পাচ্ছিনা। এমনকি আমার ভাইকে সম্পত্তির পাওয়ার অফ এটর্নি দেওয়ায় বিগত ২০২২ সালে এমেল আমার ভাইয়ের বাম হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে নিয়েছে। যা আদালতে বিচারাধীন আছে। এমতবস্থায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ধামকি দিচ্ছি। এবং চলতি ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এমেল মিয়া ও তার লোকজন আমার ভাই মর্তুজ আলী ও ভাবীকে মারধর করার পাশা-পাশি কেনবাড়ী বাজারস্থ আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করার পাশাপাশি মালামাল লুট করে নিয়েছে। এবিষয়ে আমার ভাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রশাসনের নিকট আমি এই ঘটনা সমূহের হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসী এমেল মিয়ার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।