হুমায়ূন কবীর ফরীদি, স্টাফ রিপোর্টারঃ
জগন্নাথপুর এর পল্লীতে রিংকু (১৬) নামক এক তরুণ গৃহকর্মীর রহস্য জনক মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয়রা প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন। এবিষয়ে তদন্ত চলছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানাযায়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত সমধল (নোয়াগাঁও) গ্রাম নিবাসী শ্রীকান্ত বিশ্বাস এর ছেলে কিশোর রিংকু বিশ্বাস একই ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত সমধল গ্রাম নিবাসী সাবেক ইউপি সদস্য আখলাকুর রহমান ওরফে লুলু মিয়ার ফিসারীতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহকর্মী হিসেবে গরুর খামারে গরু রাখালী করতো।এমতাবস্থায় বিগত ২২ শে জুন রোজ শনিবার দুপুর এর দিকে হঠাৎ করে এই গৃহকর্মী টগবগে তরুণ রিংকু বিশ্বাস (১৬) এর রহস্য জনক মৃত্যু হলে প্রশাসনকে না জানিয়ে এই দিনই বিকালে তাকে মাটিচাপা দিয়ে সমাহিত করা হয়েছে । খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পাশা-পাশি তার পরিবারকে বলেছেন কোনো সন্দেহ থাকলে জানানোর জন্য। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার এই মৃত্যুতে পরিবারের লোকজন ও গৃহকর্তা অর্থাৎ আখলাকুর রহমান ওরফে লুলু মিয়ার পরিবার এর লোকজন এর কথা-বার্তার মধ্যে মিল না থাকায় বিগত ৪ দিন ধরে স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে। বিষয়টি বিভিন্নভাবে চাউর হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক, সাপের ছোবলে, বিদ্যুতয়াীত হয়ে, গাছ থেকে পড়ে না অন্যভাবে কিংবা স্বাভাবিক ভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে নিহতের পিতা থানায় মামলা করেছেন। বিদায় এই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনিক ভাবে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় অনেকেই তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, নিহতের পরিবার ও লুলু মিয়ার পরিবারের লোকজন এর কথাবার্তায় মিল নেই। বিষয়টি রহস্যজনক। মরদেহটি উত্তোলন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হউক।
নিহত কিশোরের বাবা শ্রীকান্ত বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন , আমার ছেলে রিংকন বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে সাবেক ইউপি মেম্বার লুলু মিয়ার ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। সম্প্রতি বন্যার সময় আমরা চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেই। তাই ছেলের সাথে আমাদের যোগাযোগ কম ছিল। বিগত শনিবার লুলু মিয়ার ভাগ্নে কামাল মিয়া সহ কয়েকজন লোক এসে আমাদের জানায় সমধল নদীর ওপারে গিয়ে ছেলেকে দেখার জন্য। তাদের কথায় আমরা গিয়ে দেখি ছেলেকে মৃত অবস্থায় একটি চৌকির মধ্যে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এসময় তার কপালের নীচে ডান দিকে আঘাতের চিহ্ন ও মুখ দিয়ে গোবর বের হতে দেখা যায়। কিন্তু শরীরের কোথাও গোবর দেখতে পাইনি। পুরো শরীরে তেল মালিশের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, লুলু মিয়া ও তার স্বজনেরা জানান, আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে আমাদেরকে বলেন, লাশ সৎকার করার জন্য। এসময় তারা জানান, প্রশাসনের বিষয়টি তারা দেখবেন। তাই তাদের পরামর্শে মৃত সন্তানকে মাটি চাপা দেই। এ বিষয়ে থানায় এজাহার দিয়েছি।
নিহত কিশোরের মামা লোকেশ বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার রিংকুর মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে জানালে তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। তখন লুলু মিয়া প্রথমে আমাকে জানান, আমার ভাগ্নে পানিতে পড়ে মারা গেছে। এসময় দেখতে পান কপালের ডানদিকে আঘাতের চিহ্ন, মুখ দিয়ে গোবর বের হচ্ছে। লাশটি সেখান থেকে কে বা কারা আনে বা তার শরীরে কে তেল মালিশ করে তা-ও আমরা জানতে পারিনি।
জানতে চাইলে লুলু মিয়ার ছোট ভাই জাকির হোসেন জানান, নিহত কিশোর রিংকু বিশ্বাস কয়েক মাস ধরে আমাদের ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। কিন্তু গত শনিবার আম পাড়তে গিয়ে সে গাছ থেকে গোবরের স্তুপে পড়ে মারা যায়। তাই আমরা তার পরিবারকে বিষয়টি জানাই।
এ ব্যাপারে ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন , এই মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বিকাল তিন ঘটিকার সময় যাই। তাদের অভিযোগ না থাকায় আমরা লাশ সৎকার করার জন্য বলি।
চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার দিন অনুমান বিকেল তিনটায় নিহত কিশোরের মামা লুকেশ জানায়, আমার ভাগনা মারা গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খাটের ওপর লাশ। কারো প্রতি স্বজনদের সন্দেহ থাকলে থানায় জানানোর জন্য বলি। কিন্তু তাদের কোনো সন্দেহ না থাকায় আমাদের কাছে দাবি করে লাশ নিয়ে যেতে। তখন তারা লাশ নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) এএসপি সুভাশীষ ধর দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকাকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। নিহতের পিতা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। আদালতের অনুমতি পেলে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।