দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের নিয়ে ‘দুর্নীতি’ মুক্তকরনের বয়ান দিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন পাটোয়ারী। গতকাল বুধবার সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্য এক মতবিনিময় সভা ডাকেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন পাটোয়ারী।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনজন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলেও গত কয়েক বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল পাটওয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পেরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে অফিস করছেন।
কোষাধ্যক্ষ জানান, প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহম্মেদ চৌধুরী সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই চারবার অবৈধভাবে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যেখানে ১১২টি পদ অনুমোদন করেছে, সেখানে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জনের নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮’ এর ১২(১০) ধারা অনুযায়ী, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া ২৪০ জনের অধিক কর্মচারীর চাকরি বাতিল এবং তাদের বেতন-ভাতা ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে স্থগিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামেন ওই নিয়োগপ্রাপ্তরা।
২০২২ সাল থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন শুরু করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, তালা ভেঙে কক্ষের আলমিরা ও ফাইল কেবিনেট থেকে জরুরি কাগজপত্র, ব্যাংকের চেক বহি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি লুট করার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তর করে ওসমানী মেডিকেল কলেজে চালানো হচ্ছে।
সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী বলেন, প্রতিষ্ঠার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো উপাচার্য যখন দুর্নীতি বিরোধী বয়ান দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই দুদকের চার্জশিটভুক্ত পাঁচজন আসামি সভায় শ্রোতার সারিতে উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে নানা সমালোচনার ঝড় উঠে।
নেটিজেনরা বিষয়টিকে উপাচার্যের দ্বিমুখী আচরণ বলে মন্তব্য করছেন।
দুদকের চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- বিলাল আহমদ চৌধুরী, বেলাল আহমদ, আব্দুল আজিজ, তানভীর আহমদ, আব্দুল মজিদ।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির মন্তব্যে ঘরে তারেক হাসান নামে একজন লিখেন ‘শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার আবু জাফর রাজু’র আস্থাভাজন ব্যক্তিবর্গ। যারা দূর্নীতি দমন কমিশনের চার্জশিট ভূক্ত আসামী হয়েও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কোন যুক্তিতে!
এনাম আহমদ লিখেন ‘আসসালামু আলাইকুম ভাই। আপনার টিক পিছনে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিষ্টার, ছাত্রলীগের ফজলুর দামান্দ দুদকের আসামি বিলাল বসা। তার পাশেই হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগের বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মাহমুদ এর ছোট ভাই দুদকের আসামি আজিজ বসা। আফসোস ভাই বর্তমান ভিসি এদেরকে দিয়েই অফিসে কাজ করাচ্ছেন।
তারেক হাসান নামে একজন ‘প্রশ্ন ছুড়েন চুনারুঘাট-মাধবপুর (হবিগঞ্জ-৪) আসনের ২ বারের সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলীর ঘনিষ্ঠ ছোট ভাই (আব্দুল আজিজ) দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চার্জশিট ভূক্ত আসামী হওয়া সত্বেও এখনও বহাল তবিয়তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্যক্রম পরিচালনা করছেন। কোন যুক্তিতে’?
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী। পরিচালনায় ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
সভায় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক নেতা এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিষয়টি আমার নজরে ছিলোনা। আগামীতে এ বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।