হুমায়ূন কবীর ফরীদি, স্টাফ রিপোর্টারঃ
জগন্নাথপুরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ার পাশা-পাশি বসত বাড়ীতে পানি উঠে পড়েছে। কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে বন্যা কবলিত জনসাধারণ গবাদিপশু সহ পরিবার এর লোকজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন এবং উঠছেন। অনেকে ঘরের ভিতর মাঁচা বেধে বসবাস করছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বর্ষন আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা, নলজুর,রত্না ও ডাউকা নদী সহ বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েই চলছে।এমনকি কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর,স্কুল প্রাঙ্গন ও রাস্তা-ঘাট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ১৯ শে জুন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ও জানাযায়, অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে এই উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে করে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও জগন্নাথপুর পৌর এলাকার যাত্রাপাশা,শেরপুর, ভবানীপুর ও উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন এর কান্দারগাঁও, নোয়াগাঁও, কামারখাল, বালিকন্দী, গলাখাই,জগদীশপুর, শ্রীধরপাশা, সনুয়াখাই ও আশ্রয়ন প্রকল্প এর ঘর সহ ফরিদপুর, পাইলগাঁও ইউনিয়ন এর আলাগদি,জালালপুর, খানপুর, আলীপুর,পাটলী ইউনিয়ন এর সেচানী,ইসলামপুর, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন এর রানীনগর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ বাজার, আলমপুর, রৌয়াইল, চিলাউড়া- হলদিপুর ইউনিয়ন এর ভূরাখালী, দাসনোয়াগাঁও, গাদিয়ালা, বেতাউকা, বেরী সহ নিম্নাঞ্চল এর শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের বারান্দায় ও আঙ্গিনায় পানি উঠেছে। অত্রাঞ্চল এর বিভিন্ন বসতবাড়ী আঙ্গিনা ছৌই ছৌই পানি এমনকি অনেক বসত ঘরে পানি উঠে পড়েছে। অনেক এর বাড়ীতে পানি উঠায় গবাদিপশু সহ পরিবার এর লোকজন নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়ার পাশা-পাশি অনেকেই নৌকা যোগে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে উঠেছেন ও উঠছেন। আবার অনেকে ঘরের ভিতর মাঁচা বেধে বসবাস করছেন। রান্নাবান্নার সুযোগ সুবিধা না থাকায় কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ইতিমধ্যে উপজেলার ২৭/২৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে চার শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত একাধিক ব্যক্তি একান্ত আলাপকালে বলেন, আমাদের এলাকায় অর্থাৎ উল্লেখিত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাড়ীতে অর্থাৎ বসত ঘরে পানি উঠে পড়েছে তাই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা যোগে এসেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, আমরা এখানো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। রান্নাবান্না করতে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ রফিক মিয়া বলেন, অনেক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার কলকলিয়া ইউনিয়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এই চাল আগামীকাল বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করব।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-বশিরুল ইসলাম মুঠোফোনে একান্ত আলাপকালে বলেন, বন্যা সম্পর্কে আমরা সতর্ক আছি। সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশ্রয় কেন্দ্র গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে প্রায় ৩ শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আগামীকাল আশ্রয় কেন্দ্র সহ বন্যা কবলিত এলাকায় এসব খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান বৃন্দকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।