হুমায়ূন কবীর ফরীদি, স্টাফ রিপোর্টারঃ
ভারী বর্ষন আর পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুরের নদ-নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ার পাশা-পাশি বসত বাড়ীতে পানি উঠে পড়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে বন্যা কবলিত জনসাধারণ গবাদিপশু সহ পরিবার এর লোকজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ও আত্বীয় স্বজন এর বাড়ীতে উঠেছেন এবং উঠছেন। অনেকে ঘরের ভিতর মাঁচা বেঁধে বসবাস করছেন। তবে গত ১৯ শে জুন দিবাগত রাত থেকে দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কিছুটা পানি কমেছে। বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে। এমনকি সানাজিক সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিগত ১৬ ই জুন দিবাগত রাত থেকে ভারী বর্ষন আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা, নলজুর,রত্না ও ডাউকা নদী সহ বিভিন্ন হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদর সহ নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর, স্কুল প্রাঙ্গন ও রাস্তা-ঘাট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ২১ শে জুন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ও জানাযায়, অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে এই উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে করে উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এবং জগন্নাথপুর উপজেলা ভূমি অফিস, জগন্নাথপুর বাজার, রানীগঞ্জ বাজার, পৌর এলাকার হবিনগর, ইকড়ছই, যাত্রাপাশা,শেরপুর, ভবানীপুর ও উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন এর কান্দারগাঁও, নোয়াগাঁও, কামারখাল, বালিকন্দী, গলাখাই,জগদীশপুর, খাশিলা, শ্রীধরপাশা, সনুয়াখাই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ও ফরিদপুর গ্রাম , পাইলগাঁও ইউনিয়ন এর আলাগদি, জালালপুর, খানপুর, আলীপুর, পাটলী ইউনিয়ন এর সেচানী, ইসলামপুর, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন এর রানীনগর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ বাজার, আলমপুর, রৌয়াইল গ্রাম, চিলাউড়া- হলদিপুর ইউনিয়ন এর ভূরাখালী, দাসনোয়াগাঁও, গাদিয়ালা, বেতাউকা, বেরী গ্রাম সহ নিম্নাঞ্চল এর শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের বারান্দায় ও আঙ্গিনায় পানি উঠেছে। অত্রাঞ্চল এর বিভিন্ন বসতবাড়ী আঙ্গিনা ছৌই ছৌই পানি এমনকি বসত ঘরে পানি উঠে পড়েছে। তাই গবাদিপশু সহ পরিবার এর লোকজন নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়ার পাশা-পাশি অনেকেই নৌকা যোগে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে উঠেছেন ও উঠছেন। আবার অনেকে ঘরের ভিতর মাঁচা বেধে বসবাস করছেন। রান্নাবান্নার সুযোগ সুবিধা না থাকায় কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র সহ বিভিন্ন উঁচু বাড়ীতে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এই সকল আশ্রিত মানুষের মাঝে সরকারি ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এমনকি সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং আরও বিতরণ করা হবে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত একাধিক ব্যক্তি একান্ত আলাপকালে বলেন, আমাদের এলাকায় অর্থাৎ উল্লেখিত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাড়ীতে অর্থাৎ বসত ঘরে পানি উঠে পড়েছে তাই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা যোগে এসেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, আজ পানি কিছুটা কমেছে। আমরা সরকারি সহযোগিতা পেয়েছি।আরো পাবো বলে জানতে পেরেছি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল-বশিরুল ইসলাম মুঠোফোনে একান্ত আলাপকালে দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকাকে বলেন, বন্যা সম্পর্কে আমরা সতর্ক আছি। সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কিছুটা পানি কমেছে। এ পর্যন্ত ৩৪টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র সহ বিভিন্ন উঁচু বাড়ীতে ও মাদ্রাসায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সাড়েছত্রিশ টন চাল বরাদ্দ পেয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। আরো ত্রাণ সহয়তা আসবে আশাবাদী।