সিলেট প্রতিনিধি:
সিলেট রেঞ্জে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত থাকা ঘুস দুর্নীতির বরপুত্র সেই বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শক কাউছার আলমকে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসির পদ থেকে প্রত্যাহার করে ফের শিল্পাঞ্চল পুলিশে বদলি করা হয়েছে!
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দায়িত্বশীল সূত্র ওই বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এতে বলা হয় পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অ্যাডিশনাল আইজি (অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত ৪ ডিসেম্বর এক আদেশে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর থানার( ইন্সপেক্টর) কাউছার আলমকে ওসির পদ থেকে প্রত্যাহার করে শিল্পাঞ্চল পুলিশে বদলি করা হয়। একই আদেশে আগামী ১০ ডিসেম্বর ছাড়পত্র নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই নির্দেশনার ব্যথ্যয় ঘটলে পরদিন ১১ ডিসেম্বর স্ট্যান্ড রিলিজ হিসাবে গণ্য করা হবে।
এরপুর্বে চলতি বছরের ২১ আগষ্ট তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত এক আদেশে কাউছারকে তাহিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার শহর পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি করা হয়েছে।
কিন্তু তিনি কৌশলে ছাড়পত্র না নিয়ে শহর পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদান না করে ছুঁটিতে চলে যান।
এরপর তদবীর বাণিজ্যের মাধ্যমে পূর্বের বদলির আদেশ বাতিল করিয়ে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের সীমান্ত চোরাচালান বাণিজ্য, ধোপাজান চলতি নদীর খনিজ বালি পাথর চুরি ও অপরাধ প্রবণ থানা খ্যাত বিশ্বম্ভরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে যোগদান করেন।
কাউছার আলম বিভিন্ন সময় ডিও করিয়ে সিলেট রেঞ্জের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন জেলা, থানা, পুলিশ ফাঁড়িতে কৌশলে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে কমরত রয়েছেন।
তাহিরপুর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসাবে যোগদান করেন কাউছার আলম। যোগদানের পর থেকেই ঘুস, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হন।
সীমান্তের ওপার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ভারতীয় কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, জাদুকাটা , মাহারাম, শান্তিপুর, কলাগাঁও ছড়া নদী থেকে বিভিন্ন সময়ে বালি পাথর লুট, ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে কোনো কোনো সময় বালি বোঝাই ট্রলার আটক থেকে এমনকি জব্দের পর থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে তিনি দুহাতে ঘুসের টাকা আদায় করেছেন।
বিশ্বম্ভরপুর থানায় যোগদানের পর থেকেই মামলায় নয়-ছয় ও সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য ধোপাজান চলতি নদীতে খনিজ বালি পাথর চুর চক্রের নিকট থেকে নিরাপদে ঘুস আদায়ের ধান্দায় অলিখিতভাবে ব্যাক্তিগত সোর্স নিয়োগ করেন কাউছার।
এরপর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তাজ্জুত আলীর ছেলে সাইকুল ওসি কাউছারের সীমান্তের ব্যাক্তিগত সোর্স দাবিদার সাইককুলকে একটি নিয়মিত মামলার পলাতক আসামি হিসাবে গত ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় থানা পুলিশ সীমান্তের শিলডুয়ারের চান্দের বাজার থেকে গ্রেফতার করে হাতে হ্যান্ডকাফপ পরায়। পরে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় চান্দের বাজার এলাকায় পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তার পরিবারের লোকজন ও লালিত চোরাকারিরা পুলিশের উপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাইকুলকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের নামোল্লেখসহ ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বম্ভরপুর থানায় নবাগত ওসি হিসেবে কাউছার আলম যোগদানের পর থেকে চিনাকান্দি সীমান্ত চোরাচালানের ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে সাইকুল থানার ওসির সোর্স পরিচয়ে থানা পুলিশ, পুলিশের উধ্বর্তন অফিসার, বিজিবির অফিসার ও আইনশৃস্খলা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে চিনি, কসমেটিকস, মসলা, বিদেশি মাদক, ইয়াবা কারবারি, আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় সেখ নাসির বিড়ি, কাঁচা-শুকনা মাছ, ফলমুল ,খাদ্য সামগ্রী, গবাধিপশু, রসুন চোরাকারবারিদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করতে থাকে।
সাইকুলের সীমান্ত চোরাচালান,চাঁদাবাজির ব্যাপারে ওসি কাউছার আলমকে এলাকার লোকজন বারবার অভিযোগ করলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত এমনকি মাদকসহ সীমান্ত চোরাচালান , ধোপাজান চলতি নদী থেকে খনিজ বালি পাথর চুরি প্রতিরোধে কোনো দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি ওসি কাউছার ।
বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি কাউসার আলমের নিকট তাকে শিল্পাঞ্চল পুলিশে বদলি করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বদলীর আদেশ কপি এখনো হাতে পাইনি, আমি একা না, শুনেছি অনেকেই বদলি হয়েছেন।
পুলিশ হেডকোয়াটার্সের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায় তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর থানায় পুলিশ পরিদর্শক কাউসার আলমের দায়িত্বকালীন সময়ে পৃথক দুটি অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে।
সিলেট।। ০৫.১২.২৪