স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ গড়ে তুলেছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি বা আইআইটি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতকে উন্নত করতে প্রথম আইআইটি গড়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গের খড়্গপুরে। সেই কেন্দ্রই এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।
চাঞ্চল্যকরভাবে সেখানে একের পর এক ‘আত্মহত্যা’র ঘটনা ঘটছে। পুলিশ একে আত্মহননের ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও সাক্ষ্য-প্রমাণ, পরিবারের বয়ান বলছে যারা আত্মহত্যা করছে বলে পুলিশের বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে মেধাবী মুসলমান ছাত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ওয়াকিবহাল মহলের মত, মুসলিম ব্রেনগুলোকে শেষ করে দিতেই এই চক্রান্ত! গত পাঁচদিনে সেখানে দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
খড়গপুর আইআইটি’র ছাত্র ফায়জান আহমেদ মারা যান ২০২২ সালের অক্টোবরে। প্রথমে সেটিকেও আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে চলা তদন্তে সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে, ছক কষে খুন করা হয়েছিল আসামের মেধাবী ছেলে ফায়জানকে। তার ঘটনায় আজও বিচার মেলেনি। ফায়জানের মা জানিয়েছিলেন, আমার ছেলে চলে গেছে, আগামীতে এটা আপনাদেরও হতে পারে। আপনাদের সন্তানদের সেখানে রেখে আপনি কীভাবে ঘুমাবেন? দয়া করে জেগে উঠুন। এটা শুধু ফায়জান নয়, আমি সব অভিভাবকের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি।
আসামের ছাত্র ফায়জানের পর ২০২৩ সালে মৃত্যু হয় কিরণ চন্দ্র, ২০২৪ সালে সন্দেহজনকভাবে মারা যান দেবিকা পিল্লাই। কদিন আগে সাকির আলি মোল্লা এবং শাওন মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশে। খড়গপুরে লাশের এই দীর্ঘ সারির পরও কোনো মৃত্যুরই কিনারা হয়নি। আইআইটিতে খুন হওয়া ফায়জানের বৃদ্ধা মা লড়ে যাওয়াতে হাইকোর্ট দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের নির্দেশ দেয়। আর তাতে উঠে আসে ফায়জানকে খুন করা হয়েছে। ফায়জানের মা এখনও বিচারের আশায় দরজায় দরজায় ঘুরছেন। অনেকের দাবি, আইআইটি খড়গপুরে একটি চক্র রয়েছে। যারা মুসলিম, দলিত এবং বিশেষ এক আদর্শের বিরোধী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অন্য স্টাফদের বরদাশত করতে পারছে না। আর তারাই নাকি বেছে বেছে এই খুনগুলো করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, খড়গপুর থানা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি ও প্রশাসন যেকোনোভাবে এই হত্যাগুলোকে সুইসাইড বলে দেখাতে সব সময় সক্রিয় ও তৎপর থাকে। এটা কেন, তা অবশ্য রহস্যে ঢাকা।
আইআইটি খড়গপুরের রসায়ন বিভাগের জুনিয়র টেকনিশিয়ান সাকির আলি মোল্লা (৩০) আত্মঘাতী হয়েছেন তা মানতে নারাজ পরিবার। গত শুক্রবার সকালে আইআইটি ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা ওই কর্মীর কোয়ার্টার থেকেই লাশ উদ্ধার করে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। সাকিরের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সামালি গ্রামে। চাকরি সূত্রে ২০২২ সাল থেকে থাকতেন খড়গপুর আইআইটি’র কোয়ার্টারে।
আইআইটি সূত্রে খবর পাওয়ার পর শুক্রবার সকালে ক্যাম্পাসে পৌঁছে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খড়গপুর সাবডিভিশন হাসপাতালে সাকিরের পরিবার পৌঁছালে তাদের সন্তানের লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ক্যাম্পাসে যে ঘরে সে থাকত, সেই ঘরেও যেতে দেওয়া হয়নি। ময়না তদন্তের কোনো রিপোর্ট পুলিশ পরিবারকে দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি। সাকিরের ভগ্নিপতি জাহিবুদ্দিন জানান, শুক্রবার ৬টায় ফোনে খড়গপুর আইআইটি থেকে তাদেরকে বলা হয়, সাকির মারা গেছে। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি।
এদিকে সাকিরের ঘটনায় এখনও কোনো এফআইআর করা হয়নি। আইআইটি কর্তৃপক্ষও পুলিশে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। বাইরের লোকেরাই সাকিরকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। অনেকে বলছেন, সাকিরের পরিণাম হয়েছে দু’বছর আগে নিহত ফায়জানের মতো। কতদিন চলবে মেধাবীদের এই মৃত্যু মিছিল!