Sylhet 10:53 am, Wednesday, 22 January 2025

অতিথি পাখিরা শীতকালেই কেন বেড়াতে আসে?

প্রতিবছর শীতকালে দেশে নাম না জানা রংবেরঙের অনেক পাখি আসে। নদী, বিল, হাওর, জলাশয়, পুকুর ভরে যায় এসব পাখিতে। আদর করে তাদের অতিথি পাখি বলা হয়। যেহেতু প্রতিবছরই একটা নির্দিষ্ট সময়েই এই পাখিরা আসে তাই এদের পরিযায়ী পাখিও বলা যায়।

এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু পাখি ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে।
উত্তর মেরু অঞ্চলের এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।

আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় ও হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে।

এ ছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।

যেসব পাখি আসে অতিথি হয়ে

শীতকালে এদেশে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ ইত্যাদি।

এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে সুমেরুতে বাস করে এবং বাচ্চা দেয় হাঁস জাতীয় এমন পাখি শীতকালে বাংলাদেশে আসে। লাল বুকের ক্লাইক্যাসার পাখি আসে ইউরোপ থেকে।
আর অন্য সব পাখিরা আসে পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে। এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এ ছাড়া স্বচ্ছ পানির খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া নানা রং আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

অতিথি পাখি কেন আসে

সাধারণত শীত প্রধান দেশ থেকেই এসব পাখির আগমন ঘটে। এই সময়ে সেসব দেশে প্রচণ্ড শীত থাকায় তারা তা সহ্য করতে পারে না। আর এ জন্যই অন্য দেশে চলে আসে। সেক্ষেত্রে তারা অপেক্ষাকৃত কম শীতপ্রধান দেশে চলে যায়। তা ছাড়া এ সময়টাতে শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেও প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়। কারণ শীতপ্রধান এলাকায় এ সময় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শূন্যেরও বেশ নিচে। সেই সঙ্গে রয়েছে তুষারপাত। তাই কোনো গাছপালা জন্মাতেও পারে না। এসব অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে, উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চল। আর এসব অঞ্চলের পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে কম ঠাণ্ডা অঞ্চলের দিকে।

বসন্তের সময় (মার্চ-এপ্রিল) শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে, কিছু কিছু গাছপালা জন্মাতে শুরু করে। আর এই সময়েই অতিথি পাখিরা নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। তবে এসব অতিথি পাখিরা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই প্রতিবছর ভ্রমণ করে।

বাংলাদেশের যেসব এলাকায় আসে অতিথি পাখি

অতিথি পাখির কলরব আর গুঞ্জনে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিবছর মুখরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন লেকসহ সেখানকার বিভিন্ন লেকে প্রায় ২০-২৫ প্রজাতির পাখি আসে প্রতিবছর।

জাবি ক্যাম্পাস ছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, আর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এসব অতিথি পাখিদের প্রিয় অবকাশকেন্দ্র। বাংলাদেশের জলাশয়গুলোই এদের পছন্দের স্থান ও নিরাপদ আশ্রয়। বেশ কয়েক বছর ধরে নিঝুমদ্বীপ দুবলার, চরকুতুবদিয়া এলাকাতেও শীতের পাখিরা বসতি গড়েছে।

About Author Information

SYLHET JOURNAL

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

অতিথি পাখিরা শীতকালেই কেন বেড়াতে আসে?

প্রকাশের সময় : 05:13:58 am, Monday, 20 January 2025

প্রতিবছর শীতকালে দেশে নাম না জানা রংবেরঙের অনেক পাখি আসে। নদী, বিল, হাওর, জলাশয়, পুকুর ভরে যায় এসব পাখিতে। আদর করে তাদের অতিথি পাখি বলা হয়। যেহেতু প্রতিবছরই একটা নির্দিষ্ট সময়েই এই পাখিরা আসে তাই এদের পরিযায়ী পাখিও বলা যায়।

এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু পাখি ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে।
উত্তর মেরু অঞ্চলের এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।

আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় ও হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে।

এ ছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।

যেসব পাখি আসে অতিথি হয়ে

শীতকালে এদেশে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ ইত্যাদি।

এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে সুমেরুতে বাস করে এবং বাচ্চা দেয় হাঁস জাতীয় এমন পাখি শীতকালে বাংলাদেশে আসে। লাল বুকের ক্লাইক্যাসার পাখি আসে ইউরোপ থেকে।
আর অন্য সব পাখিরা আসে পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে। এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এ ছাড়া স্বচ্ছ পানির খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া নানা রং আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

অতিথি পাখি কেন আসে

সাধারণত শীত প্রধান দেশ থেকেই এসব পাখির আগমন ঘটে। এই সময়ে সেসব দেশে প্রচণ্ড শীত থাকায় তারা তা সহ্য করতে পারে না। আর এ জন্যই অন্য দেশে চলে আসে। সেক্ষেত্রে তারা অপেক্ষাকৃত কম শীতপ্রধান দেশে চলে যায়। তা ছাড়া এ সময়টাতে শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেও প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়। কারণ শীতপ্রধান এলাকায় এ সময় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শূন্যেরও বেশ নিচে। সেই সঙ্গে রয়েছে তুষারপাত। তাই কোনো গাছপালা জন্মাতেও পারে না। এসব অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে, উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চল। আর এসব অঞ্চলের পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে কম ঠাণ্ডা অঞ্চলের দিকে।

বসন্তের সময় (মার্চ-এপ্রিল) শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে, কিছু কিছু গাছপালা জন্মাতে শুরু করে। আর এই সময়েই অতিথি পাখিরা নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। তবে এসব অতিথি পাখিরা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই প্রতিবছর ভ্রমণ করে।

বাংলাদেশের যেসব এলাকায় আসে অতিথি পাখি

অতিথি পাখির কলরব আর গুঞ্জনে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিবছর মুখরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন লেকসহ সেখানকার বিভিন্ন লেকে প্রায় ২০-২৫ প্রজাতির পাখি আসে প্রতিবছর।

জাবি ক্যাম্পাস ছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, আর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এসব অতিথি পাখিদের প্রিয় অবকাশকেন্দ্র। বাংলাদেশের জলাশয়গুলোই এদের পছন্দের স্থান ও নিরাপদ আশ্রয়। বেশ কয়েক বছর ধরে নিঝুমদ্বীপ দুবলার, চরকুতুবদিয়া এলাকাতেও শীতের পাখিরা বসতি গড়েছে।