Sylhet 1:57 pm, Tuesday, 21 January 2025

অর্থ নয়ছয়, ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমান।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে(শেকৃবি) আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ৩৫ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত করা হয়নি। এমনকি প্রকৌশল দপ্তর থেকে এসব প্রকল্পের নথি সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের তা দেওয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য গ্রিনহাউস নির্মাণ, বিভিন্ন দপ্তরের জন্য ফার্নিচার ক্রয় এবং লিফট ক্রয়ের জন্য তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিনহাউস নির্মাণের জন্য এবং লিফট সরবরাহের জন্য দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমেÑ১২ কোটি ১০ লাখ এবং ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। একই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ফার্নিচার সরবরাহের জন্য অন্য একটি কোম্পানিকে ১৩ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়।

এসব প্রকল্পে ঠিকাদারি চুক্তি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করা এবং মানহীন পণ্য সরবরাহ করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যা তৎকালীন সময় বিভিন্ন পত্রিকার খবরে উঠে আসে।

অভিযোগের ভিত্তিতে এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে গেলে তথ্য না দিয়ে টালবাহানা করায় এসব দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জড়িত কি না, তার প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসেও গত প্রশাসনের দুর্নীতি বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের মন্থরগতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রিনহাউস নির্মাণের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। গ্রিনহাউসের পলিকার্বনেটেড দেওয়ালে ৮ মিমির শিট ব্যবহারের কথা থাকলেও তা অপেক্ষা পাতলা শিট ব্যবহার করা হয়েছে। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও গ্রিনহাউসের কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রোডাকশন এবং কন্ট্রোল ইউনিট এখনো ইনস্টল করা হয়নি, চালু হয়নি অটোমেশন সিস্টেম। পলিকার্বনেড শেডটিও মানসম্মত নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন আবাসিক ভবন ও হলের লিফট সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কার্যাদেশ অমান্য করে নিম্নমানের লিফট সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। ওই আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিফটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা অনেক কম, চলার সময় ঝনঝন শব্দ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

মাঝেমধ্যেই লাইট, ফ্যান নষ্ট হয়ে যায়। আবার অকেজো হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহকৃত ডট ফার্নিচারের বিষয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহের ফলে প্রকল্পকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ একাধিক দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে তা নিতে অসম্মতি জানিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের চাপে তারা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বছর না ঘুরতেই অনেক আসবাব ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এসব অভিযোগ ও দুর্নীতির বিষয় অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল দপ্তর নানা টালবাহানা করে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মোমেনুল আহসান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দুই মাস কালক্ষেপণ করিয়ে পরবর্তী সময়ে তিনি জানান, যে কোনো তথ্য পেতে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল লতিফ।’ পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের কাছে তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ‘কী কী তথ্য লাগবে আমি বলে দিচ্ছি, তথ্য দিয়ে দেবে।’

প্রাক্তন প্রকৌশলী আজিজুর রহমান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসরপ্রাপ্ত হলেও পরবর্তী প্রকল্পের সব কার্যক্রম কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, তার অবসরের পর আর কোনো কাজ হয়নি, তিনি যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে গেছেন সেগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে।’

নথির বিষয়ে প্রাক্তন প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সব নিয়ম মেনে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছি। অবসরের সময় আমার সব কাগজপত্র তৎকালীন প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি, যার ফলে পরবর্তী সময়ে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। তথ্য বুঝিয়ে না দিলে আমার পেনশন পাচ্ছি কীভাবে?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, এ ব্যাপক দুর্নীতির যথাযথ তদন্ত না হলে ভবিষ্যতে দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ের তদন্তের দাবি করেছেন তারা।

এসব অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা অনুসন্ধান শুরুর পর সম্প্রতি (১২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তথ্য না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিগত প্রশাসন সব গায়েব করে ফেলেছে। তথ্য খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে। আগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আজিজ সাহেব তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এগুলো করেছেন। এখন যিনি দায়িত্বে আছেন উনি খুঁজে খুঁজে বের করছেন। তদন্ত কমিটি করেছি, এক মাসের মধ্যেই তদন্ত হবে বলে আশা করা যায়।

About Author Information

SYLHET JOURNAL

জনপ্রিয় সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

অর্থ নয়ছয়, ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমান।

প্রকাশের সময় : 05:46:12 am, Tuesday, 21 January 2025

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে(শেকৃবি) আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ৩৫ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত করা হয়নি। এমনকি প্রকৌশল দপ্তর থেকে এসব প্রকল্পের নথি সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের তা দেওয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য গ্রিনহাউস নির্মাণ, বিভিন্ন দপ্তরের জন্য ফার্নিচার ক্রয় এবং লিফট ক্রয়ের জন্য তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিনহাউস নির্মাণের জন্য এবং লিফট সরবরাহের জন্য দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমেÑ১২ কোটি ১০ লাখ এবং ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। একই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ফার্নিচার সরবরাহের জন্য অন্য একটি কোম্পানিকে ১৩ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়।

এসব প্রকল্পে ঠিকাদারি চুক্তি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করা এবং মানহীন পণ্য সরবরাহ করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যা তৎকালীন সময় বিভিন্ন পত্রিকার খবরে উঠে আসে।

অভিযোগের ভিত্তিতে এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে গেলে তথ্য না দিয়ে টালবাহানা করায় এসব দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জড়িত কি না, তার প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসেও গত প্রশাসনের দুর্নীতি বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের মন্থরগতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রিনহাউস নির্মাণের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। গ্রিনহাউসের পলিকার্বনেটেড দেওয়ালে ৮ মিমির শিট ব্যবহারের কথা থাকলেও তা অপেক্ষা পাতলা শিট ব্যবহার করা হয়েছে। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও গ্রিনহাউসের কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রোডাকশন এবং কন্ট্রোল ইউনিট এখনো ইনস্টল করা হয়নি, চালু হয়নি অটোমেশন সিস্টেম। পলিকার্বনেড শেডটিও মানসম্মত নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন আবাসিক ভবন ও হলের লিফট সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কার্যাদেশ অমান্য করে নিম্নমানের লিফট সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। ওই আবাসিক ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিফটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা অনেক কম, চলার সময় ঝনঝন শব্দ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

মাঝেমধ্যেই লাইট, ফ্যান নষ্ট হয়ে যায়। আবার অকেজো হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহকৃত ডট ফার্নিচারের বিষয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহের ফলে প্রকল্পকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ একাধিক দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে তা নিতে অসম্মতি জানিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের চাপে তারা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বছর না ঘুরতেই অনেক আসবাব ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এসব অভিযোগ ও দুর্নীতির বিষয় অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল দপ্তর নানা টালবাহানা করে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মোমেনুল আহসান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দুই মাস কালক্ষেপণ করিয়ে পরবর্তী সময়ে তিনি জানান, যে কোনো তথ্য পেতে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল লতিফ।’ পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের কাছে তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ‘কী কী তথ্য লাগবে আমি বলে দিচ্ছি, তথ্য দিয়ে দেবে।’

প্রাক্তন প্রকৌশলী আজিজুর রহমান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসরপ্রাপ্ত হলেও পরবর্তী প্রকল্পের সব কার্যক্রম কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, তার অবসরের পর আর কোনো কাজ হয়নি, তিনি যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে গেছেন সেগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে।’

নথির বিষয়ে প্রাক্তন প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সব নিয়ম মেনে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছি। অবসরের সময় আমার সব কাগজপত্র তৎকালীন প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি, যার ফলে পরবর্তী সময়ে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। তথ্য বুঝিয়ে না দিলে আমার পেনশন পাচ্ছি কীভাবে?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, এ ব্যাপক দুর্নীতির যথাযথ তদন্ত না হলে ভবিষ্যতে দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ের তদন্তের দাবি করেছেন তারা।

এসব অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা অনুসন্ধান শুরুর পর সম্প্রতি (১২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তথ্য না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিগত প্রশাসন সব গায়েব করে ফেলেছে। তথ্য খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে। আগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আজিজ সাহেব তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এগুলো করেছেন। এখন যিনি দায়িত্বে আছেন উনি খুঁজে খুঁজে বের করছেন। তদন্ত কমিটি করেছি, এক মাসের মধ্যেই তদন্ত হবে বলে আশা করা যায়।