এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজের বিদায়: ভালোবাসায় সিক্ত এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সমাপ্তি

  • আপডেট টাইম : মে ২৯ ২০২৫, ২৩:৫৮
  • 12 বার পঠিত
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজের বিদায়: ভালোবাসায় সিক্ত এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সমাপ্তি

মেহেদী হাসান তানিম, এমসি কলেজ প্রতিনিধি:

শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ আজ তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতি টেনে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) গমন করেছেন। তাঁর বিদায় উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী কলেজে এক আবেগঘন পরিবেশে নানা আয়োজন করা হয়। সকালে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এবং সন্ধ্যায় শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে বিএনসিসি প্লাটুন কর্তৃক ‘গার্ড অব অনার’ এবং রোভার স্কাউটস গ্রুপ কর্তৃক ‘সালাম’ প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় বিদায়বেলার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসে প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজকে শুভেচ্ছা জানান।
পরে কলেজের অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেন অধ্যক্ষ। এ সময় কলেজের সকল বিভাগ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং বিভিন্ন উপহার ও স্মারক তাঁর হাতে তুলে দেন। এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আকমল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, “এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হওয়া আমার জন্য ছিল অত্যন্ত গর্বের। আমি আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই এই ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি এবং আমার শিক্ষকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই এখানে কাটালাম। এই সময়ে আমি চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে তাদের যুগোপযোগী একটি সুন্দর ক্যাম্পাস ও পাঠদানের ব্যবস্থা করতে। জানিনা কতটুকু পেরেছি। আশা করি আপনারা ভালোভাবে লেখাপড়া করে দেশের একজন সৎ ও দক্ষ নাগরিক হয়ে দেশের সেবা করবেন।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মো. গিয়াস উদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ফরিদ আহমেদ, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের কলেজ শাখার আহ্বায়ক সেলিম আহমদ সাগর, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান সৌরভ, ছাত্র মজলিসের সভাপতি আব্দুল বাছিত, ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত কান্তি দাস, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক লবীব আহমদ, যুব রেড ক্রিসেন্টের দলনেতা ডালিম আহমেদ, বিজ্ঞান ক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ জাবের, মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি তাহিন আহমেদ, কবিতা পরিষদের সভাপতি মইনুল হাসান আবির, বিএনসিসির ক্যাডেট কর্পোরাল মোহাম্মদ মনোয়ার হোসাইন, রোভার স্কাউটসের সহসভাপতি রুবেল ফারহিন, থিয়েটার মুরারিচাঁদের সাধারণ সম্পাদক সায়মা জাহান, ইংরেজি বিভাগের ইরিনা হক, রোভার স্কাউটসের সাবেক সভাপতি সেলিম মাহমুদ, ডিগ্রি ক্লাবের সভাপতি রিহান খান প্রমুখ।
এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মো. মুছলেহ উদ্দিন মুনাঈম ও কবিতা পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অনুশুয়া অতসীর যৌথ সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, “রিয়াজ স্যার মানেই এক আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার নাম। যিনি ১২৪ একরের এই ভূমিকে নিজে ধারণ করতেন, ধারণ করতেন এখানকার সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের। যার কারণে তার সুনিপুণ নেতৃত্বে কালের খেয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে থাকা একটি ক্যাম্পাস আজ পূর্ণতা পেয়েছে। যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী আসত না, সেই ক্যাম্পাস আজ শিক্ষার্থীতে মুখর থাকে।”
তারা আরও বলেন, “একজন শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর যেরকম সম্পর্ক থাকা দরকার, স্যার দেশের অন্যতম প্রাচীন, বড় ও ঐতিহ্যবাহী কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও তাঁর সাথে সকল শিক্ষার্থীর এরকমই সম্পর্ক। স্যারের অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি যেন সকল শিক্ষার্থীদের তাঁর সান্নিধ্যে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ স্যার অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, নিরহংকারী ও আপোসহীন একজন ব্যক্তি। যার আপোসহীনতার কারণে কোনো সন্ত্রাসী কোনো অন্যায় আবদার কায়েম করতে পারেনি এই ক্যাম্পাসে। সবসময় ভালো থাকুন এই শিক্ষাগুরু। আপনাকে এই ক্যাম্পাস মিস করবে।”
প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজের অবসরোত্তর ছুটিতে গমন উপলক্ষে এদিন কলেজ ক্যাম্পাস সাবেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। চতুর্দশ বিসিএসের এই শিক্ষক কর্মকর্তা এমসি কলেজের ৫৩তম অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে আজ ২৯ মে ২০২৫ তারিখে তিনি তাঁর বর্ণাঢ্য চাকুরীজীবন থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে গমন করলেন। এর আগে তিনি এক বছর সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তারও পূর্বে তিনি এমসি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বিদায় এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর