সুরমার পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচে

  • আপডেট টাইম : জুন ০২ ২০২৫, ০২:৪৬
  • 21 বার পঠিত
সুরমার পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচে

সুনামগঞ্জে ও বাংলাদেশের উজানে ভারতের মেঘালয় গেল ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে ১২২.০ মি.মি ও শিলংয়ে ৪৪. ০ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে ১২৫.০ মি.মি, লাউড়েরগড়ে ৯৫.০ মি.মি, ছাতকে ৯৩.০ মি.মি এবং মহেশখোলায় ৬৭.০ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে এর আগের দুইদিন অর্থাৎ ৩১ মে ৪১০ ও ৩০ মে ২১৭.০ মি.মি, বৃষ্টিপাত হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে। মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার সীমান্তবতীর্ পাহাড়ি নদীতে তীব্র বেগে নামছে পাহাড়ি ঢল। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রাম ও যাতায়াত সড়ক। রবিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতকীর্করণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সোমেশ^রী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে ও পাশ^র্বতীর্ নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে আশার কথা এখনো জেলার কিছু কিছু হাওর পানিতে পরিপূর্ণ হয়নি।

রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৬.৮৯ সে.মি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল, যা বিপদসীমার ০. ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ রয়েছে। এছাড়াও সকাল ৬টায় লাউড়েরগড়ে যাদুকাটা নদীর পানি ৬.৪৮ সে.মি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছেল, যা বিপদসীমার ২.৯৮সে.মি নিচে রয়েছে। তবে দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ২২ সে.মি বেড়ে ৫.৪৭ সে.মি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছেল, যা বিপদসীমার ১.০৮ সে.মি নিচে রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতকীর্করণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টা মাঝারি—ভারি থেকে অতিভারী ও পরবর্তী দুইদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সোমেশ^রী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির জরুরি খবর আদান—প্রদান এবং জনগণের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ২০৪ নম্বর কক্ষে (২য় তলা) নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ—সহাকারী প্রকৌশলী (অ:দা) শুভ দেবনাথ (মোবা: ০১৭৯৫—৫০৭১৩৭), উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের উপ—প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম (মোবা:  ০১৭২১—৪৮২০৮০) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. সাজু মিয়া (মোবা:  ০১৭২১—৫১২১১৬) দায়িত্ব পালন করবেন।

 

বৃষ্টিপাতে মেঘালয়ে ৬ জনের মৃত্যু

গত দুই দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জ সীমান্তের লাগোয়া ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছয় জনের প্রাণহানির হয়েছে। এর আগে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল, যা এখন রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টিপাতের রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যের উচ্চ বৃষ্টিপাতের অঞ্চল যেমন সোহরা (চেরাপুঞ্জি) এবং মাওসিনরামে। শনিবার জানানো হয়— মাওসিনরাম এবং সোহরা উভয় স্থানেই বিগত ২৪ ঘন্টায় ৪৭ সেমি (৪৭০ মিমি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যেই যা ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে।

মেঘালয় রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, ২৯—৩১ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ২৩টি ব্লকের ৪৯টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ১,০৯৪ জন। তেত্রিশটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নংস্টোইনের মাওকাদিয়াং গ্রাম, উমলিং ব্লকের আমজোক গ্রাম, সুমের লাতারা, রিলবং এবং মাওব্লেই থেকে ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। কালটেক শেলায় বন্যায় দুটি বাড়ি ভেসে গেছে। মাইলিয়াম, পাইনুরসলা, মাওসিনরাম এবং শেল্লা ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। রি—ভোইয়ের উমসিং ব্লকের সুমের লাতারায় বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শিলং—ডাউকি সড়কে বেশ কয়েকটি ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিলং—ডাউকি সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট যা বারবার ধসের কারণে এখন বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্ব খাসি পাহাড় এবং পূর্ব গারো পাহাড়ের মতো এলাকায়, বাসিন্দারা রাস্তা এবং সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভ্রমণে পরামর্শ জারি করেছেন এবং অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে লোকেদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও আগামী দিনগুলিতেও মেঘালয় এবং উত্তর—পূর্বের অন্যান্য অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমডি। (শিলং টাইমস)

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর