সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও প্লাবিত এলাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি কমলেও যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল সেসব এলাকায় পানি ধীরে কমায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘ হচ্ছে।
চার দিন পর শনিবার (২২জুন)সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর পানি বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে । তবে এখনো জেলায় অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল থেকে পানি এখনো নামে নি। পৌর শহরের পশ্চিম হাজিপাড়া,নবী নগর কালীপুর সহ বেশ কিছু পাড়ায় এখনো নৌকায় চলাচল করছেন নাগরিক রা।। তথ্য বলছে এখনো প্রায় ২৫ হাজার পরিবার আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ‘গত দুদিন সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হয়েছে। এতে পাহাড়ি ঢল কম নামছে। মূলত এ কারণেই নদীর পানি কমছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সমান্য বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত পরিস্থিতি অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই। এসময় তিনি বলেন ‘ যেসব এলাকা থেকে এখনো পানি নামে নি তা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে নেমে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে!
এদিকে পৌর শহরের পানি নাম কামার কারণ হিসেবে নাগরিকরা শহরের ড্রেইন সিস্টেম ও অপরিকল্পিত নিচু রাস্তাকে দায়ি করছেন।
পশ্চিম হাজি পাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘ আমরা দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার কাছে দাবি জানিয়ে আসছি চলাচলের রাস্তাটি উঁচু করার জন্য বলছি বড় ড্রেইনের ব্যবস্থা করার জন্য কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে বছরে বছরে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় এবারো নৌকা ছাড়া মূল সড়ক( সুনামগঞ্জ প্রবেশের সড়ক) থেকে বাসাবাড়িতে যাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে এই এলাকায় বন্যাকে কেন্দ্র করে পৌরসভার কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।
নবীনগরের বাসিন্দা বিষ্ণু দাস থাকেন কালী মন্দির এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঐ এলাকায় এখন কোমর পানি জমাট! বিষ্ণু দাস বলেন, শহরে মানুষ বাড়ছে কিন্তু পানি যাওয়ার রাস্তা কমছে।কালভার্ট ছিল এখানে সেটাও ভরাট হয়েগেছে। ড্রেইন কিংবা কালভার্ট না করলে নগরীর মানুষের ভোগান্তিআরো বাড়বে!
পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাওসার আহমেদ জানান, ‘ তার এলাকার প্রায় ৫০ পরিবার এখনো বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। নিচু এলাকা থেকে এখনো নামে নি। আমি সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি মানুষজনের। তবে পৌরসভা থেকে তেমন কোনো ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। প্রথম দিকে সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আক্রান্ত হলেও পরে জেলার সব উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ছয় দিন ধরে মানুষ দুর্ভোগে আছেন। দিন যত যাচ্ছে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি তত বাড়ছে। অনেকের ঘরে খাবারের সংকট আছে।
পাউবোর তথ্যমতে, গত রোববার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সোমবার একই সময়ে পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চার দিন পর শনিবার (২২ জুন)সুরমা নদীর পানি এখানে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি।
জেলার উঁচু এলাকায় পানি কমলেও নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে আছে। ছাতক, সদর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় অসংখ্য বাড়িঘরে এখনো পানি আছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত আছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ৮ লাখ মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কুলেন্দু শেখর দাস
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি