Sylhet 4:35 pm, Monday, 23 December 2024

গোয়াইনঘাটে দুই কামরুল, খায়রুল ও রাসেলের নেতৃত্বে চলছে চোরাচালানের রমরমা ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

৫ আগষ্ট  বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পরই সিলেটের গোয়াইনঘাটে চোরাচালানের সিন্ডিকেটে হাতবদল হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগে এ সিন্ডিকেট একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন সিলেট ও গোয়াইনঘাটের  তৎকালীন ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

 

তবে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর চিনি চোরাচালানের সঙ্গে এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। যদিও বিএনপির ত্যাগী কোনো নেতাকর্মী এমন চোরাকারবারে জড়িত নন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

তবে গোয়াইনঘাটের একাধিক চোরাকারবারিদের দেওয়া তথ্যমতে, ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকেও  স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদল নামধারী  একটি চক্রের সঙ্গে মিলে গোয়াইনঘাটে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন।

 

এই চক্রে রয়েছে কামরুল, খায়রুল, হালিম, বুলবুল, জসিম, হোসেন, জিয়া, লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সথী গ্রামের  ডাকাত সর্দার কামরুল ও রাসেল । এছাড়া রয়েছে ছাত্র দলের আরিফুল ইসলাম, ফরিদ, কামাল, হুসেন, সোলেমান,মোশাররফসহ তাদের সিন্ডিকেট। তাঁদের নেতৃত্বেই এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাকারবারিদের  চোরাচালান ব্যবসার চিনি,চা পাতা, কসমেটিক্স,কিট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিলের মত মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য ট্রাক ও পিকাপে করে  নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন,পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ও রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা রাধানগর, মাতুরতল, বিছানাকান্দি-হাঁদারপাড় ইত্যাদি সীমান্ত  দিয়ে  ভারতীয় পণ্য সামগ্রী অবৈধভাবে  বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চিনি, চা পাতা, কসমেটিক, কিট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিল, চোরাই গাড়ি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন  পণ্য আসে।

 

এসব পণ্য তামাবিল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাট লালদিঘীরপাড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের অনুসারীরা পাহাড়া  দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবৈধ চোরাই চিনি ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মালামালের ট্রাক সিলেট শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দিতেন এবং এখনো তা অব্যাহত আছে  শুধু  লাইনের নিয়ন্ত্রণে দল ও ব্যাক্তিবদল ঘটেছে মাত্র।

আবার একাধিক চোরাকারবারির ভাষ্যমতে, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কারবারিরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। চোরাচালানের হোতা ছাত্রলীগ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারিও আগের চেয়ে বেড়েছে, রাস্তায় সেনাবাহিনীর চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে, পুলিশও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আটক করছে। এতে পাচার অনেকটা কমে গিয়েছে তবুও একবারে থেমে নেই চোরাচালান। অদ্য আবার চিনি পাচার শুরু হয়েছে। এখন শহরে নির্বিঘ্নে চোরাই চিনির প্রবেশের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের ভাঙ্গিয়ে চলা কিছু ব্যক্তি ও  অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা।

 

এ ব্যাপারে জানতে যুবদল নেতা কামরুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা পারলে আমার কিছু করেন,এই বলে হুংকার দিয়ে ফোন কেটে দেন।

 

তবে সিলেট জেলা যুবদলের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে  জানান  তিনি বাঁ তাঁর সংগঠনের কেউ এসব চোরাকারবারের সাথে জড়িত নয়, বরং দলের হাইকমান্ড থেকে নেতা কর্মীদের প্রতি স্পষ্ট   নির্দেশ আছে  এসবে না জড়ানোর। কেউ যদি চোরাকারবারে জড়িত থাকে এবং এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে তাহলে সংগঠন সাথে সাথে অ্যাকশন নেবে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি  ফোন রিসিভ করেননি।

About Author Information

SYLHET JOURNAL

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাতকে রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্টে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

গোয়াইনঘাটে দুই কামরুল, খায়রুল ও রাসেলের নেতৃত্বে চলছে চোরাচালানের রমরমা ব্যবসা

প্রকাশের সময় : 08:22:01 pm, Monday, 30 September 2024

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

৫ আগষ্ট  বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পরই সিলেটের গোয়াইনঘাটে চোরাচালানের সিন্ডিকেটে হাতবদল হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগে এ সিন্ডিকেট একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন সিলেট ও গোয়াইনঘাটের  তৎকালীন ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

 

তবে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর চিনি চোরাচালানের সঙ্গে এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। যদিও বিএনপির ত্যাগী কোনো নেতাকর্মী এমন চোরাকারবারে জড়িত নন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

তবে গোয়াইনঘাটের একাধিক চোরাকারবারিদের দেওয়া তথ্যমতে, ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকেও  স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদল নামধারী  একটি চক্রের সঙ্গে মিলে গোয়াইনঘাটে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন।

 

এই চক্রে রয়েছে কামরুল, খায়রুল, হালিম, বুলবুল, জসিম, হোসেন, জিয়া, লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সথী গ্রামের  ডাকাত সর্দার কামরুল ও রাসেল । এছাড়া রয়েছে ছাত্র দলের আরিফুল ইসলাম, ফরিদ, কামাল, হুসেন, সোলেমান,মোশাররফসহ তাদের সিন্ডিকেট। তাঁদের নেতৃত্বেই এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাকারবারিদের  চোরাচালান ব্যবসার চিনি,চা পাতা, কসমেটিক্স,কিট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিলের মত মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য ট্রাক ও পিকাপে করে  নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন,পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ও রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা রাধানগর, মাতুরতল, বিছানাকান্দি-হাঁদারপাড় ইত্যাদি সীমান্ত  দিয়ে  ভারতীয় পণ্য সামগ্রী অবৈধভাবে  বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চিনি, চা পাতা, কসমেটিক, কিট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিল, চোরাই গাড়ি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন  পণ্য আসে।

 

এসব পণ্য তামাবিল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাট লালদিঘীরপাড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের অনুসারীরা পাহাড়া  দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবৈধ চোরাই চিনি ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মালামালের ট্রাক সিলেট শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দিতেন এবং এখনো তা অব্যাহত আছে  শুধু  লাইনের নিয়ন্ত্রণে দল ও ব্যাক্তিবদল ঘটেছে মাত্র।

আবার একাধিক চোরাকারবারির ভাষ্যমতে, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কারবারিরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। চোরাচালানের হোতা ছাত্রলীগ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারিও আগের চেয়ে বেড়েছে, রাস্তায় সেনাবাহিনীর চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে, পুলিশও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আটক করছে। এতে পাচার অনেকটা কমে গিয়েছে তবুও একবারে থেমে নেই চোরাচালান। অদ্য আবার চিনি পাচার শুরু হয়েছে। এখন শহরে নির্বিঘ্নে চোরাই চিনির প্রবেশের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের ভাঙ্গিয়ে চলা কিছু ব্যক্তি ও  অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা।

 

এ ব্যাপারে জানতে যুবদল নেতা কামরুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা পারলে আমার কিছু করেন,এই বলে হুংকার দিয়ে ফোন কেটে দেন।

 

তবে সিলেট জেলা যুবদলের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে  জানান  তিনি বাঁ তাঁর সংগঠনের কেউ এসব চোরাকারবারের সাথে জড়িত নয়, বরং দলের হাইকমান্ড থেকে নেতা কর্মীদের প্রতি স্পষ্ট   নির্দেশ আছে  এসবে না জড়ানোর। কেউ যদি চোরাকারবারে জড়িত থাকে এবং এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে তাহলে সংগঠন সাথে সাথে অ্যাকশন নেবে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি  ফোন রিসিভ করেননি।