Sylhet 4:34 pm, Tuesday, 24 December 2024

ভূ মি ক ম্পে র ঝুঁ কি তে সিলেট

ঝড়-বন্যার বাংলাদেশ এখন আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখে। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পে। এর অনেকগুলোর উৎপত্তিস্থলও দেশের ভেতরে। গত ১৪ মাসে ১২টি ভূমিকম্প হয়েছে। যেগুলো ছিল মৃদু থেকে মাঝারি আকারের। ভূতত্ত্ববিদরা বলে আসছেন, ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে যে কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের নামও। 

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে দেশেও হতে পারে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে তা কল্পনাও করতে পারেন না তারা। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে, তার সিকি ভাগও নেই ভূমিকম্প মোকাবিলায়।

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ছোট আকারের ভূমিকম্প বেড়েছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবেই এ ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়েছে।

সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলাও এমন ঝুঁকিতে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ওই কম্পন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে।

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের আসামে ১৮৯৭ সালে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিলেটের একেবারেই কাছে এবং ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলেটেও হয় ক্ষয়ক্ষতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের ধারণা নেই।
সুনামগঞ্জ, জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে সিলেট ও ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি রয়েছে।

About Author Information

SYLHET JOURNAL

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাতকে রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্টে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ভূ মি ক ম্পে র ঝুঁ কি তে সিলেট

প্রকাশের সময় : 07:55:28 am, Friday, 15 March 2024

ঝড়-বন্যার বাংলাদেশ এখন আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখে। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পে। এর অনেকগুলোর উৎপত্তিস্থলও দেশের ভেতরে। গত ১৪ মাসে ১২টি ভূমিকম্প হয়েছে। যেগুলো ছিল মৃদু থেকে মাঝারি আকারের। ভূতত্ত্ববিদরা বলে আসছেন, ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে যে কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের নামও। 

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে দেশেও হতে পারে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে তা কল্পনাও করতে পারেন না তারা। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে, তার সিকি ভাগও নেই ভূমিকম্প মোকাবিলায়।

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ছোট আকারের ভূমিকম্প বেড়েছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবেই এ ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়েছে।

সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলাও এমন ঝুঁকিতে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ওই কম্পন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে।

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের আসামে ১৮৯৭ সালে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিলেটের একেবারেই কাছে এবং ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলেটেও হয় ক্ষয়ক্ষতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের ধারণা নেই।
সুনামগঞ্জ, জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে সিলেট ও ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি রয়েছে।