Sylhet 1:49 pm, Wednesday, 22 January 2025

আবারও মাঠে ফেরার পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

পাঁচ মাস আগে ক্ষমতা হারানোর পর ধীরে ধীরে আবারও মাঠে ফেরার পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে বিদেশের মাটিতে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে সরব হচ্ছে দলটি। এসব সভা-সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
মাঠে ফিরতে কয়েকটি ধাপে কৌশলে এগোচ্ছে দলটি।

বর্তমানে দলটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। ফলে জুলাই-আগস্টে দলের অবস্থান নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা স্পষ্ট করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। যেতে চাইছেন জনগণের কাছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী রবিবার দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জার্মানিতে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন শেখ হাসিনা।

মোটা দাগে বর্তমানে চারটি বিষয়কে সামনে রেখে সামনে এগোতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিদেশের পাশাপাশি দেশেও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, মাঠের রাজনীতির বাস্তবতা মেনে নিয়ে অপেক্ষা করা, সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে ভারসাম্য বজায় রেখে চলা এবং ফের সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগ দেওয়া।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের নেত্রী নিয়মিত ফোরামে যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আমাদের দিক থেকেও মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।
শুধু বিদেশে নয়, দেশেও কর্মসূচি দিতে চায় আওয়ামী লীগক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিদেশের মাটিতে বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। তবে দেশে এখনো কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। দেশের মাটিতেও কর্মসূচি দিতে চায় দলটি। এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব সভা-সমাবেশ করা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগে সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপি উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন।

একাধিক সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
জার্মানিতে আয়োজিত এক সভায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দেন।
ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বিদেশের কমিটিগুলো আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক সক্রিয়। কেউ কেউ আগামী ২০ জানুয়ারির অপেক্ষায় আছেন। কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, টানা ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে জনগণের কাছে যাওয়া দরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের শীর্ষ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো শক্তি এসে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। এখনো দেশের ৫০ শতাংশ জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। আমাদের কাজ তাদের কাছে যাওয়া। ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমান দূর করা।
সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগপরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই দলটির কাছে। আবার বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা দেশ ছাড়া। দেশে যাঁরা আছেন, তাঁরাও আত্মগোপনে। তৃণমূল থেকেও ব্যক্তি-উদ্যোগে কিছু করা সম্ভব না। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কাঠামো কিভাবে আবারও গোছানো যায় সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছে দলটি।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক কালের কণ্ঠকে বলেন, একেবারে কোনো কিছুই দল থেকে করা হচ্ছে না—এমনটা ঠিক নয়। যেসব কর্মসূচি ছোট পরিসরে হচ্ছে সেগুলো খবরে আসছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা আবারও এক ছাতার নিচে সমবেত হতে সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগী হচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ শূন্যগত ৫ আগস্টের আগে থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতি আর নেই।
সূত্র মতে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। তবে সেখানে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। কলকাতায় অন্য যে নেতারা আছেন, তাঁরাও ওবায়দুল কাদেরের ওপর বিরক্ত। দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের কোনো বিবৃতিও পাওয়া যাচ্ছে না। দলের পক্ষে বেশির ভাগ বিবৃতি দিচ্ছেন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ভিডিও বার্তায় সামনে আসছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সরকার, বিএনপি, নির্বাচন বর্তমানে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগ তত্পর থাকলেও দেশের মাটিতে দলের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করতে সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন এই তিনদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দ্রুত নির্বাচন চায় ক্ষমতা হারানো দলটি। তাই সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন সম্পর্কে দৃষ্টি রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

About Author Information

SYLHET JOURNAL

জনপ্রিয় সংবাদ

জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনের ‘ঐক্য’ নিয়ে নজরুল বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

আবারও মাঠে ফেরার পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশের সময় : 05:52:47 am, Saturday, 18 January 2025

পাঁচ মাস আগে ক্ষমতা হারানোর পর ধীরে ধীরে আবারও মাঠে ফেরার পথ খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে বিদেশের মাটিতে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে সরব হচ্ছে দলটি। এসব সভা-সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
মাঠে ফিরতে কয়েকটি ধাপে কৌশলে এগোচ্ছে দলটি।

বর্তমানে দলটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। ফলে জুলাই-আগস্টে দলের অবস্থান নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা স্পষ্ট করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। যেতে চাইছেন জনগণের কাছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী রবিবার দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জার্মানিতে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন শেখ হাসিনা।

মোটা দাগে বর্তমানে চারটি বিষয়কে সামনে রেখে সামনে এগোতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিদেশের পাশাপাশি দেশেও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, মাঠের রাজনীতির বাস্তবতা মেনে নিয়ে অপেক্ষা করা, সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে ভারসাম্য বজায় রেখে চলা এবং ফের সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগ দেওয়া।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের নেত্রী নিয়মিত ফোরামে যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আমাদের দিক থেকেও মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।
শুধু বিদেশে নয়, দেশেও কর্মসূচি দিতে চায় আওয়ামী লীগক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিদেশের মাটিতে বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। তবে দেশে এখনো কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। দেশের মাটিতেও কর্মসূচি দিতে চায় দলটি। এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব সভা-সমাবেশ করা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগে সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপি উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন।

একাধিক সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
জার্মানিতে আয়োজিত এক সভায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দেন।
ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বিদেশের কমিটিগুলো আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক সক্রিয়। কেউ কেউ আগামী ২০ জানুয়ারির অপেক্ষায় আছেন। কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, টানা ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে জনগণের কাছে যাওয়া দরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের শীর্ষ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো শক্তি এসে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। এখনো দেশের ৫০ শতাংশ জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। আমাদের কাজ তাদের কাছে যাওয়া। ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমান দূর করা।
সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগপরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই দলটির কাছে। আবার বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা দেশ ছাড়া। দেশে যাঁরা আছেন, তাঁরাও আত্মগোপনে। তৃণমূল থেকেও ব্যক্তি-উদ্যোগে কিছু করা সম্ভব না। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কাঠামো কিভাবে আবারও গোছানো যায় সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছে দলটি।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক কালের কণ্ঠকে বলেন, একেবারে কোনো কিছুই দল থেকে করা হচ্ছে না—এমনটা ঠিক নয়। যেসব কর্মসূচি ছোট পরিসরে হচ্ছে সেগুলো খবরে আসছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা আবারও এক ছাতার নিচে সমবেত হতে সাংগঠনিক কাঠামো গোছাতে মনোযোগী হচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ শূন্যগত ৫ আগস্টের আগে থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতি আর নেই।
সূত্র মতে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। তবে সেখানে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। কলকাতায় অন্য যে নেতারা আছেন, তাঁরাও ওবায়দুল কাদেরের ওপর বিরক্ত। দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের কোনো বিবৃতিও পাওয়া যাচ্ছে না। দলের পক্ষে বেশির ভাগ বিবৃতি দিচ্ছেন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ভিডিও বার্তায় সামনে আসছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সরকার, বিএনপি, নির্বাচন বর্তমানে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগ তত্পর থাকলেও দেশের মাটিতে দলের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করতে সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন এই তিনদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দ্রুত নির্বাচন চায় ক্ষমতা হারানো দলটি। তাই সরকার, বিএনপি ও নির্বাচন সম্পর্কে দৃষ্টি রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।