এমসি কলেজে নতুন মসজিদ নির্মাণে শিক্ষার্থীদের জোর দাবি, স্থান পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা

ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের দাবিতে তাদের আন্দোলন জোরদার করেছেন। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে নতুন মসজিদের জন্য বাজেট আসার খবরে আশার আলো দেখলেও, পূর্বের মসজিদের স্থানে এর নির্মাণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কয়েকদিন আগে সরকারি প্রকৌশলীরা কলেজের পুরনো মসজিদের স্থান পরিদর্শন করে এর মাপজোখ করতে এসেছিলেন। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুরনো মসজিদটি ক্যাম্পাসের অনেক ভেতরের দিকে অপেক্ষাকৃত নিচু ও নির্জন স্থানে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা সেখানে যেতে তেমন আগ্রহবোধ করেন না। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণতা এবং দুর্গম রাস্তার কারণে মসজিদটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। সেখানে নিয়মিত শুধু জোহরের নামাজ পড়া হয়। পুরনো মসজিদের করুণ চিত্র তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা জানান, মসজিদটির ভেতরের ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। মসজিদের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি মাটির এবং দুই পাশে আগাছায় পরিপূর্ণ। শুকনো মৌসুমে ধুলোয় একাকার হয়ে যায় এবং বর্ষায় কাঁদায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় ছিল, মসজিদটিতে কোনো ভালো প্রস্রাবখানা বা অজুখানা ছিল না। মুসল্লিদের অজু করার জন্য পুকুরের ঘাটের ওপর নির্ভর করতে হতো।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। তাদের মূল দাবি, মসজিদটি কলেজের প্রধান ফটকের পাশে স্থাপন করা হোক, যা সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। নতুন মসজিদে পর্যাপ্ত স্থান, আধুনিক অজুখানা ও প্রস্রাবখানার ব্যবস্থা এবং সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করেন, মেইনগেটের পাশে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মিত হলে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীসহ সকলের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা সম্ভব হবে এবং এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে একটি সুন্দর ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীও যুক্ত হবে।

আজ (২৪ এপ্রিল) দুপুরে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির সমর্থনে অধ্যক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। স্মারকলিপিতে তারা নতুন মসজিদের প্রয়োজনীয়তা এবং পূর্বের স্থানে মসজিদ নির্মাণের অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, কলেজ প্রশাসন তাদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করে মসজিদের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করবে, যা সকলের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এমসি কলেজ শাখার সভাপতি ইসমাঈল খান সৌরভ জানান, এমসি কলেজ সিলেট অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। এখানে বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। একটি সুন্দর ও আধুনিক মসজিদ শুধু মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণ করবে না, বরং ক্যাম্পাসের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, মেইনগেটের পাশে মসজিদ নির্মিত হলে বহিরাগত মুসল্লিরাও সহজে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং কলেজের একটি সুন্দর পরিচিতিও তৈরি হবে।
কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, তাদের এই যৌক্তিক দাবির প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে দ্রুত মসজিদের স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে এবং মেইনগেটের পাশেই একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ছাত্রদের এই জোরালো দাবি কলেজ প্রশাসন কিভাবে মূল্যায়ন করে এবং কত দ্রুত সময়ের মধ্যে এমসি কলেজ একটি নতুন ও আধুনিক মসজিদের মুখ দেখবে তা সময়ের অপেক্ষা।