বিশ্বম্ভরপুরে ইউএনও মফিজুরে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন ও বি*ক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির হা*মলা

মেহেদী হাসান তানিম

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, অযোগ্যতা এবং সাবেক ইউএনও জনাব সাদিউর রহিম জাদিদ মহোদয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধ্বংসের প্রতিবাদে আজ রবিবার (মে ৪, ২০২৫) সকাল ১১টায় উপজেলার কারেন্টের বাজার বোয়াল চত্বরে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুরের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচি থেকে বর্তমান ইউএনও মফিজুর রহমানের অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার ও দুর্নীতি তদন্ত করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
মানব বন্ধনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা এবং হাতে থাকা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড থেকে অভিযোগ করা হয়, বর্তমান ইউএনও মফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে বিশ্বম্ভরপুরের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং উপজেলা পিছনের দিকে যাচ্ছে। তার অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে সাবেক ইউএনও সাদিউর রহিম জাদিদ মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা উপজেলার পর্যটন ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্পগুলো আজ ধ্বংসের মুখে। তারা বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ইউএনও মফিজুর রহমান। অভিযোগ অনুযায়ী, হাওর বিলাস, পাহাড় বিলাস, মাল্টিপারপাস সেন্টার এবং পলাশ বাজারের হাওর বৃত্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো অযত্ন, অবহেলা ও অনিয়মের শিকার হচ্ছে। পলাশ বাজারের হাওর বৃত্তের রক্ষণাবেক্ষণ নেই, আলোকসজ্জা কেটে দেওয়া হয়েছে এবং ওয়াক ওয়ে ভেঙ্গে গেলেও মেরামত করা হচ্ছে না, যার ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। মাল্টিপারপাস সেন্টারে অব্যবস্থাপনার কারণে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং ত্যাগী উদ্যোক্তাদের নানা অজুহাতে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে কোনো ধরণের দেখভাল করা হচ্ছে না। হাওর বিলাসের দেখভাল না করায় হাওর ভিউ ক্যাফে অব্যবস্থাপনায় ভেঙ্গে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও, চিনাকান্দি মুক্তিযোদ্ধা উদ্যানও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে তার জৌলুস হারাচ্ছে এবং ধ্বংসের পথে। এছাড়াও সাধারণ নাগরিকদের সাথে অসদাচরণ, বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে নিষ্ক্রিয়তা, সরকারি অর্থায়নে আসা দুম্বার মাংস বিতরণে অনিয়ম, PIO অফিসের অফিস সহায়কের মাধ্যমে প্রকল্প টাকা আত্মসাৎ এবং সীমান্ত এলাকার অবৈধ চোরাচালানে মদদ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সচেতন মহল মনে করেন, দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিশ্বম্ভরপুর থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বক্তারা ইউএনও’র ব্যক্তিগত বিলাসের জন্য জনগনের অর্থে অযৌক্তিক ও উচ্চ ব্যয়ের কয়েকটি প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে তার বাসভবনে একটি ডায়নিং রুম নির্মাণে ৩০ লক্ষ টাকা, বাসভবনের সামনে অযৌক্তিকভাবে ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঘাটলা নির্মাণ, মাল্টিপারপাস সেন্টারে পাবলিক লাইব্রেরী থাকা সত্ত্বেও নতুন লাইব্রেরী নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়, ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এক কক্ষের রেস্ট হাউজ নির্মাণ এবং বিদ্যমান ওয়েলকাম গেইট ভেঙ্গে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন গেইট নির্মাণ। এসব প্রকল্পকে অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
মানব বন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। তারা “বিশ্বম্ভরপুরের অযোগ্য ও অদক্ষ ইউএনও মফিজুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, লুটপাট, অযৌক্তিক প্রকল্প ও অদক্ষ কার্যক্রম গ্রহণের প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ” লেখা ব্যানার এবং “মফিজ হটাও বিশ্বম্ভরপুর বাঁচাও”, “মফিজ তুমি চলে যাও রিয়েলিটি মেনে নাও”, “সাবধান মফিজ উন্নয়নের নামে অর্থ লুটপাটের ধান্দা জনগণ মেনে নেবে না”, “পাড়া-মহল্লায় খবর দে দুর্নীতিকে কবর দে”, “উন্নয়নের বিশ্বম্ভরপুর ধ্বংস করেছে মফিজুর”, “উন্নয়নের স্থাপনা ধ্বংস করতে পারো না” লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
মানব বন্ধন কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভকারীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের দিকে রওয়ানা দেন। মিছিলটি মাল্টিপারপাস সেন্টারের সামনে পৌঁছালে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। আকস্মিক এই হামলায় মিছিলকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় এলাকাবাসী ও হামলাকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইউএনও মফিজুর রহমানের পক্ষ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই হামলা চালিয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে তার কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
সচেতন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাবাসীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই মানব বন্ধন ও মিছিল থেকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা কোনোভাবেই বিশ্বম্ভরপুরের এই বেহাল দশা মেনে নেবেন না। “আমাদের বিশ্বম্ভরপুর, আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে” শ্লোগানে তারা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ঘোষণা দেন এবং দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। মিছিলের উপর হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে এবং উপজেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।