আশুগঞ্জ দিয়ে ভারতের মালামাল পরিবহনের ট্রানজিট প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত ছয় মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে কোনো ট্রানজিটের পণ্য কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় যায়নি। এমনকি সিলেটের জকিগঞ্জ দিয়েও ট্রানজিটের মালামাল ভারতের করিমগঞ্জ যায়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে, বিশেষ করে ত্রিপুরায় পণ্য নিতে কলকাতা-আশুগঞ্জ (নৌপথ), আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা (সড়কপথ)—এই পথেই বেশি আগ্রহ ছিল ভারতের। এ ছাড়া কলকাতা-জকিগঞ্জ (নৌপথ), জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ (সড়কপথ) পথটিও চালু আছে।
কেন গত ছয় মাসে এ দুই পথে ট্রানজিটের মালামাল যায়নি, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বন্দরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নতুন জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। ভারী মালামাল ওঠানামার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ভারতীয় ঠিকাদার চার লেনের সড়কের কাজ ফেলে চলে যায়। দুই মাসের বেশি কাজ বন্ধ ছিল। তাই রাস্তা ভারী যানচলাচলের অনেকটাই অনুপযোগী।
অন্যদিকে নাব্যতা–সংকটে জকিগঞ্জ দিয়ে ট্রানজিট আপাতত বন্ধ আছে। কলকাতা থেকে নৌপথে জকিগঞ্জ যায় পণ্যের চালান। পরে ট্রাকে ওই সব মালামাল সীমান্ত পার হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ যায়। জানা গেছে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে নাব্যতা কম আছে। তাই পণ্যের চালান নিয়ে এই পথে চলাচল বেশ কঠিন।
এ ছাড়া ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এর প্রভাব ভারতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পড়তে পারে। এ কারণে ট্রানজিটে পণ্য পরিবহনে ভাটার টান চলছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ভারতের ভারী মালামাল আগরতলায় যাচ্ছে না। বন্দরে জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। শিগগিরই আবার পুরোদমে ট্রানজিট শুরু হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে ভারতের টাটা গ্রুপের টায়ারের একটি চালান কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আগরতলায় যাওয়ার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সেটিও এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। কবে যাবে, তা–ও ঠিক হয়নি।
কত পণ্য গেল
২০১৬ সালের জুন মাসে কলকাতা-আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা পথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিট শুরু হয়। এর আগে ট্রানজিটের মাশুল কত হবে, তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক বছর শুধু দর-কষাকষি হয়। এমনকি মাশুল নেওয়া উচিত হবে কি না, তা-ও আলোচনায় এসেছে। গত সাড়ে আট বছরে বিষয়টি তেমন একটা লাভজনক হয়নি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কলকাতা-আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা পথে ট্রানজিট ব্যবহারে আগ্রহই দেখাচ্ছেন না।
গত সাড়ে আট বছরে সব মিলিয়ে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ৩৩টি চালান গেছে। এর বেশির ভাগই লোহা ও লোহাজাতীয় পণ্য। সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ১৪টি জাহাজের চালানে (ট্রিপ) ১৩ হাজার টনের বেশি ভারতীয় রেলওয়ের লোহাজাতীয় পণ্যের চালান গেছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে কোনো পণ্য যায়নি।
২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০১১ সালের দিকে আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে প্রথম ট্রানজিটের পণ্য ত্রিপুরায় যায়। তখন ভারত সরকারের বিশেষ অনুরোধে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনে এ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ। পরে এ পথে ট্রানজিট নিয়মিত করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
কয়েক বছর দর-কষাকষির পর টনপ্রতি ১৯২ টাকা ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণ করে বাংলাদেশ। এর বাইরে টনপ্রতি ৫০ টাকা নিরাপত্তা মাশুল ও নৌবন্দরে ল্যান্ডিং শিপিং বাবদ টনপ্রতি সাড়ে ৩৪ টাকা মাশুল আছে। সব মিলিয়ে প্রতি টনে ২৭৭ টাকা মাশুল পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া মাঝনদীতে কার্গো জাহাজ অবস্থানের জন্য আলাদা মাশুল আছে।