
দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে চিলাই নদীর পূর্বপাড় দুই কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকরা এসব অভিযোগ তুলেছেন। বাঁধের গোড়া থেকেই মেশিন (এস্কেভেটর) দিয়ে মাটি কেটে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। এতে বাঁধের দুই পাশ দুর্বল এবং মূল বাঁধের গোড়ার ক্ষতি ও দুর্বল বলে মনে করছেন কৃষকরা। স্থানীয়দের কোন বাঁধা-নিষেধ না মেনে বাঁধ নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সহজে বাঁধের মাটি আনতে গিয়ে ছালিক মিয়ার বাড়ির আঙ্গিনা থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে এনে বাড়ির আঙ্গিনায় গর্ত করা হয়েছে। হত দরিদ্র ছালিক মিয়ার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তারা গরিব মানুষ এজন্য তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বাড়ির উঠান থেকে মাটি কেটে পুকুর করা হয়েছে। পিআইসির সভাপতি আনোয়ার ভূঁইয়া বলেন ঘন্টা প্রতি তাদেরতিন হাজার টাকা দিলে পুকুর ভরিয়ে দিবেন। তিনি গরিব মানুষ এতো টাকা পাবেন কই। ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক এমদাদুল হক বলেন, বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে তার পুকুর পাড়ের ৬০ টি গাছ কেটে ফেলেছে কমিটির লোক। যার বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা হবে। দেখাযায় রাস্থায় সারি সারি গাছ কেটে রাখা হয়েছে। টমেটো ক্ষেত, সবজি ক্ষেত নষ্ট করে জমি থেকে মাটি আনা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরকারি ডিজাইনমতো বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে বাঁধেো বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীনে মোকামছড়া থেকে পেকপাড়া-আননপাড়া দুই কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৯৭ লাখ টাকা। কাজের শুরুতে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটাসহ প্রকল্প পরিকল্পনা মোতাবেক বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না এমন অভিযোগে উঠে। এছাড়াও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রকল্প মনিটরিং কোন সাইনবোর্ড টানানো হয়নি। হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীনে ওই প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে খোদ সমিতির অনেকেরই প্রকল্পের বিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই।
স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই জানিয়েছেন, কৃষকদের কল্যাণে যে দিক দিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা সে দিক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না বলে স্হানীয় কৃষকরা জানান। হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধার্থে ও উপজেলা এলজিইডি অফিসের যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ যা ইচ্ছে তাই করা হচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকদের তেমন কোন উপকারে আসবে না ওই বাঁধে।
হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির বর্তমান কার্যকরী সদস্য, আব্দুল মন্নান, খলিলুর রহমান, সোনাবান বিবি, চান মিয়া, জামাল তালুকদার, প্রকল্পের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে জানিয়ে। সমিতির পদ-পদবীধারী কিছু সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মনগড়া ভাবে এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয়ভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের কোন তদারকি নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ণ কমিটিতে কারা আছে তাও তাদের জানা নেই। এই বাঁধ কৃষকদের কোন উপকারে আসবে না। বর্তমান ইউপি সদস্য ও সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির বলেছেন, বাঁধের গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পুকুর মতো গর্ত খনন করে ফেলা হচ্ছে। এতে কৃষকদের ফসলী জমি বিনষ্ট করে এলজিইডির পুরনো রাস্তায় মাটির প্রলেপ দিয়ে ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্প হজম করার পায়তারা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে যাতে কেউ কথা না বলতে পারে সে জন্য সমিতির সভাপতি আনোয়ার ভুঁইয়া ও তার প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি আনোয়ার ভূইয়ার কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বলা হলে তিনি এসব সব বিষয় অস্বীকার করেন। প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবুল ডাক্তার বলেছেন, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবেই হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেহের নিগার তনু বলেন এই বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, তদন্ত সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।